টপ…টপ…টপ…মৃত্তিকার গা ঘেঁষে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরেই যাচ্ছে। একটানা বৈচিত্র্যহীন শব্দ। মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে মৃত্তিকা বলতে চায়, “ভিন্ন পথে যাও।” পরে আবার চুপ থাকে। থাক, তার নিশ্চল জীবনে একমাত্র গতির যা দেখা মেলে, তাতো ঐ বিন্দু বিন্দু জলের মাঝেই।
বড় একঘেয়ে জীবন মৃত্তিকার। পাহাড়ের গায়ে কঠিন শিলার উপরিভাগে কিঞ্চিত নরম শরীর নিয়ে তার বসবাস। সঙ্গী বলতে পাহাড়ের গা ঘামা জলের ছোট ছোট ফোঁটা। শেওলা ছাড়া কিছু জন্মেও না তার পিচ্ছিল শরীরে। কয়েক পলকে জল জমা হয়, আর ঝরে পড়ে নীচে, পাহাড়ের পাদদেশে ছোট্ট ছড়ায়। ছড়া থেকে ঝরনা…ঝরনা থেকে উচ্ছল পাহাড়ী নদী…।
মাঝে মাঝে দুয়েকটা জলকণার সাথে সখ্য হয় তার। পাহাড়ে জল সংকট দেখা দিলে জলকণা ফোঁটায় পরিণত হতে সময় নেয়, তখনি টুকটাক কথা হয় তাদের সাথে। মৃত্তিকার অঢেল সময়, জলবন্ধুদেরই সময় হয় যৎকিঞ্চিত। জলবন্ধুরা অনেক গল্প বলে, পর্বত গহবরে তাদের বাড়ির খবর, পাহাড়ের রন্ধ্র বেয়ে চলার খবর। স্বচ্ছ জল ওদের স্বপ্নের কথা বলে। সাগরের নোনা জলের সাথে মিলনের কথা বলে। মৃত্তিকা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ে।
একদিন এক ছোট্ট জলবন্ধু মৃত্তিকাকে বলে, যাবে বন্ধু আমার সাথে? আজন্ম জড়তায় অভ্যস্ত মৃত্তিকা ভয় পায় পথ চলায়।
- থাক, কী দরকার, তোমার স্বচ্ছতা ঘোলা করে, আমাকে সঙ্গী করে? মৃত্তিকা জলবন্ধু-কে নিবৃত্ত করে।
এভাবেই চলে। মাঝে মাঝে জলকণাদের ডাকা-ডাকিতে মৃদু কঠিন মৃত্তিকার অন্তর গলনোন্মুখ হয়। এমনি এক দিনে, পাহাড়ের অন্দর হতে জলকণাদের উগ্র মিছিল আসে। পাহাড়ী ঢল! মিছিলের এক বন্ধু মৃত্তিকার কানে কানে শোনায়, “আজি সময় পথে নামার, ভাঙনের শব্দ শোন নি?” আগে থেকেই কিছুটা কোমল হওয়া হৃদয়ে বাধা দেয়ার ক্ষমতা হারায় মৃত্তিকা।
স্বচ্ছ জল ঘোলা করে, জলবন্ধুর সঙ্গী হয়ে নদী সমভূমি সাগর দেখার মানসে মৃত্তিকা ক্ষুদ্র কণায় খসে পড়ে।
শুরু হয় নতুন সংগ্রাম। এখানে ওখানে নানা বাধা, নানা প্রলোভন পথ আগলে দাঁড়ায়। নদীর দু’পারের মৃত্তিকার স্তুপ তাদের সাথে থেকে যাবার আহবান জানায়। পথ চলতে চলতে সে দেখে তার স্বজাতি মাটিতে জন্মানো তৃণলতা, গুল্ম, ফসলের মাঠ, আর সবুজ বনানী। তার গা ঘেঁষে চলে যায় মাছের দল। নদীর গতিময়তায় কারো ফুরসত নেই অন্য কারো দিকে ফিরে তাকানোর।
মৃত্তিকা জলকণা-কে শুধায়- আর কত দূর?
- সামনেই সমভূমি, পূরোটা জুড়ে তোমারই সতীর্থ মাটি। সান্তনা দেয় জলবন্ধু।
মন শান্ত হয় না মৃত্তিকার। তার তো বাসনা সাগর দেখার। স্বপ্ন তার সাগরের ঊর্মিমালার সাথে জলকেলি করার।
হঠাৎ রুদ্ধ হয় স্বপ্নের পথচলা। উদ্দাম স্রোতধারা ধীরে ধীরে শীর্ণ হয়। প্রাকৃতিক আর মনুষ্যসৃষ্ট বিবিধ আপদ দস্যুর মতো নদীর গলা টিপে ধরে।
- আর বুঝি হয় না পথচলা। তোমাকে বয়ে নেবার ক্ষমতা হারাচ্ছি ক্রমে ক্রমে। জলবন্ধু সকরুণ স্বরে বলে।
- আগেই যদি থামতাম! হতে পারতাম পলি, সবুজ ব-দ্বীপে যুক্ত হয়ে কৃষকের মাঠে যোগাতে পারতাম উর্বরা শক্তি, দেখতে পারতাম দোলায়মান ফসলের শীষের ফাঁকে কিষাণীর হাসি। মৃত্তিকার আশাহত স্বগতোক্তি।
…………………………………………………………..
ধু ধু বালুচর। জলের একটি অতি ক্ষীণ ধারা প্রমাণে ব্যস্ত-এটি একটি নদী ছিল। রুক্ষ বালুচরের এক কোনে এক বুক কষ্ট নিয়ে কোমল হৃদয় মৃত্তিকা মুখ গুজে পড়ে থাকে।
হয়তো বান ডাকবে কোন দিন…জলধারা সজাগ সচল উত্তাল হবে…নদীর বুকে গড়িয়ে গড়িয়ে নয়, জলধারার মিছিলে শামিল হয়ে মোহনায় পৌঁছুবে মৃত্তিকা…মিলবে সাগরের ঢেউয়ের সাথে…সাগরবেলায় ঘর বাঁধবে…জোয়ার-ভাটার সাথে হবে নিত্যদিনের মিতালী !!!
১৯ জানুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৪৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪